মোঃ মোকাররম হোসাইন
জয়পুরহাট জেলা প্রতিনিধিঃ
হিন্দু সম্প্রদায়ের ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা।এ উৎসব উপলক্ষে প্রতিমা তৈরি শেষ করে, এখন চলছে রং তুলির আঁচড়ে সাজিয়ে নেওয়ার কাজ ।সারাদেশের মতো কালাইয়ে ও মন্দিরে মন্দিরে পুরোদমে চলছে পূজার প্রস্তুতি।পুজা মন্ডপে প্রতিমা তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন মৃৎশিল্পীরা।
সনাতন ধর্মাবলম্বীরা বলেন,শারদীয়া দুর্গাপূজা আগামী ৯ অক্টোবর,বুধবার ষষ্ঠী পূজা দিয়ে শুরু হয়ে ১৩ অক্টোবর রবিবার বিজয়া দশমীর মধ্য দিয়ে শেষ হবে এবারের শারদীয়া দুর্গাপূজা আনুষ্ঠানিকতা শেষ হবে।
শারদীয় দুর্গোৎসবের প্রধান অনুষঙ্গ হলো দেবী দুর্গার বাহন সিংহ সহ মহিষাসুরের প্রতিমা সঙ্গে দেবী লক্ষ্মী, সরস্বতী, দেবতা কার্তিক, গণেশ, এবং তাদের বাহন পেঁচা, হাঁস, ইঁদুর আর ময়ূর। উৎসব সামনে রেখে, প্রতিমা তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন মৃৎশিল্পীরা। প্রতিমাশিল্পীদের সঙ্গে ব্যস্ত সময় পার করছেন তাদের কারিগররাও। পূজা শুরুর আগেই প্রতিমা গুলোকে তুলতে হবে মণ্ডপে। ইতোমধ্যে প্রতিমার কাঠামোর মাটির লাগানো কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে। এরপর শুরু হবে রং ও সাজ সজ্জার কাজ।এ উপজেলার পুজা মন্ডপের কারিগরদের সাথে কথা বললে জানান, সামনে বেশি সময় না থাকায় দিনরাত পরিশ্রম করতে হচ্ছে ।
এ উপজেলার কয়েকটি পুজা মন্ডপে সরেজমিনে গিয়ে ঘুরে দেখা যায় যে ,দম ফেলার সময় নেই কারিগরদের। সুনিপুণ হাতে মাটি লাগানোর কাজে ব্যস্ত শিল্পীরা। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত কেউ কাদা তৈরি করছেন, কেউ কাদা দিয়ে হাত-পা বানাচ্ছেন। তাই ব্যস্ত সময় পার করছেন প্রতিমা শিল্পীরা। মাটি দিয়ে সুনিপুণ হাতে তৈরি করছেন কারুকার্যময় অলঙ্কার। আর সেই অলঙ্কার প্রতিমার শরীরে জড়িয়ে দিয়ে সাজিয়ে তুলছেন অনন্যা রূপে। দিনরাত কাজ করে যাচ্ছেন দেবী দূর্গাকে সকলের কাছে অপরূপ সাজে প্রদর্শন করার জন্য। প্রতিমা তৈরিতে কোন ধরনের ঘাটতি রাখতে চাইছেন না কারিগররা।
এ উপজেলার কালাই পৌরসভার প্রতিমা তৈরির কারিগর সুমল চন্দ্র কর্মকার বলেন,আমি দীর্ঘ ১৬ বছর যাবত প্রতিমা তৈরি করে আসছি।আগের মতো মানুষ মাটির তৈরি জিনিসপত্র ব্যাবহার না করায় আমাদের প্রায় সারা বছরই অলস সময় কাটাতে হয়। তবে দুর্গাপূজা চলাকালীন প্রতিমা তৈরি করে যে টাকা আয় হয় তা দিয়ে কোনো মতে সারা বছর সংসার চালাই। প্রতিমা কারিগর আরও জানান,এ বছর আমার হাতে মোট ১১টি প্রতিমা তৈরির কাজ রয়েছে।
আরেক প্রতিমা কারিগর মাধব চন্দ্র বর্মণ বলেন যে, আমি দীর্ঘ ১৫ বছরের বেশি সময় যাবত প্রতিমা তৈরি করে আসছি। দুর্গা প্রতিমা ছাড়াও সকল ধরনের প্রতিমা আমরা তৈরি করি। এবার ১০টি প্রতিমার অর্ডার পেয়েছি। তবে দ্রব্যমূল্যের সাথে তাল মিলিয়ে রং, তুলি ও সাজসজ্জার দাম বেশি হওয়ায় এবং প্রতিমা তৈরির মজুরি কম পাওয়ায় কিছুটা অসন্তোষ রয়েছে শিল্পীদের।
শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে সরকারের পক্ষ থেকে প্রতিবছর যে অনুদান বা উপহার দেওয়া হয়, তা প্রক্রিয়াধীন। তালিকা অনুযায়ী মণ্ডপ বা মন্দির কর্তৃপক্ষকে উপহার দেওয়া হবে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট উপজেলা প্রশাসন। সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে দুর্গাপূজার কার্যক্রম সম্পন্ন করার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে বলে জানিয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও।
কালাই উপজেলার পূজা উদযাপন কমিটির তথ্যমতে, এ বছর উপজেলায় পাঁচটি ইউনিয়ন একটি পৌরসভারসহ ২৪ টি মণ্ডপ ও মন্দিরে পূজা উদযাপিত হবে। কালাই পৌরসভায় ০২টি, আহম্মেদাবাদ ইউনিয়ন০৪ টি,মাত্রাই ইউনিয়ন ০৬টি,উদয়পুর ইউনিয়ন০৪টি,পুনট ইউনিয়ন ০৬টি, জিন্দারপুর ইউনিয়ন ০২টি,পূজা মণ্ডপ সাজানোর কাজ চলছে।
কালাই উপজেলার পূজা উদযাপন কমিটির সাধারণ সম্পাদক শ্রী উওম কুমার মহন্ত (বিটল) বলেন, এ উপজেলায় ২৪টি পূজা মন্ডপে শারদীয় দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে। সার্বিক পরিস্থিতি অন্তত সন্তোষজনক। প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি বিএনপি, জামায়াত, ইসলামী আন্দোলন, হেফাজতে ইসলামসহ সমস্ত দল আমাদের পাশে আসেন। আমরা উৎসব মুখর পরিবেশের মধ্যে দিয়ে শারদীয় দুর্গাপূজা উদযাপন করবে বলে আশাবাদী।
কালাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা(ওসি)ওয়াসিম আল বারী বলেন,প্রতিটি পূজা মন্ডপে নিরাপত্তার জন্য পুলিশ মোতায়ন থাকবে। পূজা মন্ডপের বাইরে ও রাস্তায় পুলিশের পাশাপাশি আনসার সদস্য,র্যাব,সেনাবাহিনীসহ সাদা পোশাকে গোয়েন্দা নজরদারি থাকবে।আশা করছি প্রতি বছরের মতো এবারও কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে শারদীয় দুর্গোৎসব পালিত হবে।