ঢাকা বৃহস্পতিবার ২২ মে, ২০২৫
আজিজুর রহমান জয় ; বিশেষ প্রতিবেদক
মাধবপুরে তেলিয়াপাড়াস্থ এনজিও নিশান অফিসে আমানত কারিদের ভীড় বেড়েই চলেছে। গত কয়েক বছর ধরে কৃষক, শ্রমিক, ব্যবসায়ী, চাকুরীজীবী, প্রবাসীসহ কমবেশি সব পেশার লোকজন নিশানে টাকা জমা করেছে।
গত কয়েক মাস ধরে শত শত পাওনাদার নিশান অফিসে টাকা ফেরত পেতে চিৎকার করেছেন। কিন্তু আদৌ টাকা ফেরত পাবে কিনা কিংবা টাকা ফেরত দেওয়ার সমর্থ বা ইচ্ছে আছে কিনা এ নিয়ে সন্দেহের ধুম্রজাল সৃষ্টি হয়েছে।
নিশানের একজন কর্মকর্তা জানান, গত ১৫ বছর নিশান স্বাস্থ্য ও পরিবেশ সোসাইটি সমবায় সমিতির নাম দিয়ে তেলিয়াপাড়া রেলষ্টেশনের পূর্বপাশে অফিস খুলে বসে নিশান। সমবায় সমিতির নিয়ম অনুযায়ী সীমিত সংখ্যক সদস্য নিয়ে নিজেদের মধ্যে ঋনদান পরিচালনা করার কথা নিশানের। কিন্তু মাধবপুর সমবায় অফিসের দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে সিলেট বিভাগের তেলিয়াপাড়া চা বাগানে নিশান ক্ষুদ্র ঋন কার্যক্রম শুরু করেন।
একই সাথে প্রতি লাখে মাসে ২ থেকে ৩ হাজার টাকা মুনাফার লোভ দেখিয়ে বিভিন্ন পেশাজীবী মানুষের কাছ থেকে আমানত সংগ্রহ করে। এ কাজটি করেছেন নিশানের মঈন উদ্দিন বেলাল, তার স্ত্রী আমেনা বেগম, ছেলে সায়েম, ছেলে সালমান, শ্যালক জালাল উদ্দিন ও মাসুদ মিয়া। তারা ছয় জন একই পরিবারের সদস্য।
৫০ টাকার ষ্টাম্প দিয়ে কর্জ হিসেবে ৬ পরিচালক মানুষের কাছ থেকে টাকা নিয়েছে। ওই টাকা দিয়ে তারা জগদীশপুর তেমুনিয়ায় নিশান টাওয়ার, নিশান অটো ইট প্রস্তুতকরণ, মোটর সাইকেল শোরুম সহ বিভিন্ন ব্যবসা গড়ে তুলেছে। এ ছাড়া মানুষের আমানতের টাকা দিয়ে সবাই বিলাসবহুল গাড়ি কিনেছে। প্রথম কয়েক বছর লোভনীয় অফার দেখিয়ে আমানতকারীদের প্রতি লাখে দুই তিন হাজারে করে টাকা দিয়েছে।
এ খবর সারাদেশে ছড়িয়ে পড়লে ধনী থেকে দরিদ্র পর্যন্ত নিজের সহায় সম্বল বিক্রি করে নিশানে জমা করেছে। কিন্তু এক বছর ধরে টাকা সংকট দেখিয়ে আসল ও সুদ ফেতর দিচ্ছেনা। প্রতিদিনই দেখা যায় নিশান অফিসের সামনে পাওনাদাররা টাকার জন্য হৈ হুল্লোড় চিৎকার কান্না কাটি ও আহাজারি । কিন্তু টাকা ফেরতের কোন লক্ষণ নেই। রবিবার সকালে নিশান কার্যালয়ে কথা হয় আমানতদারীদে বেশ কয়েকজন মহিলা জানান, আমরা অনেক কষ্ট করে নিজের জমিজমা গরু, ছাগল ও ব্যবসা বাণিজ্য, চাকরি বাকরি করে নিশানে টাকা জমা করেছি। অনেকে আবার মেয়েকে বিবাহ দেওয়ার জন্য টাকা গচ্ছিত রেখেছে।
কিন্তু এখন নিশান আমাদের টাকা নিয়ে নিজেদের জীবন গড়েছেন। সুরমা গ্রামের নুরুল ইসলাম জানান, আনোয়ার গ্রুপে জমি বিক্রি করে সমুদয় টাকা নিশানে জমা করেছি। এখন নিশান টাকা ফেরত দিচ্ছে না। সরকার যদি কোন ব্যবস্থা নিলে আমরা টাকা ফেরত পাব। তারা সরকারের সহযোগিতা কামনা করেছেন।
ইউপি চেয়ারম্যান পারভেজ হোসেন চৌধুরীকে নিয়ে মাধবপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার জাহিদ বিন কাসেম নিশানের ৪ পরিচালকের সাথে রুদ্ধদ্ধার বৈঠক করেছেন। পরে ইউএনও উপস্থিত জনতার উদ্দেশ্যে বলেন, সকল মানুষের টাকা ফিরিয়ে দিতে প্রশাসন চেষ্টা করছে। তারা যাতে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে না পারে তাদের তিন পাসপোর্ট পুলিশের কাছে জমা রাখা হয়েছে। তারা কার কার কাছ থেকে কি পরিমাণ টাকা নিয়েছে এবং তাদের কোথায় কি পরিমাণ সম্পদ বা টাকা রয়েছে তার হিসেব করতে তারা সময় চেয়েছে। আশা করি নিশান আন্তরিক হলে মানুষের আমানতের টাকা ফেরত দেওয়া সম্ভব হবে।
কিন্তু সময় গড়িয়ে মাস পার হচ্ছে দিন দিন নিশান এনজিও র প্রতারণার ফাঁদে পা রাখা মানুষ গুলোর আহাজারীও বাড়ছে।
এদিকে গ্রাহকের টাকা ফেরত না দেওয়ায় নিশান কে মাইক্রোক্রেডি রেগুলেটরি অথরিটি প্রতিষ্ঠানের ক্ষুদ্র ঋণ কার্যক্রম পরিচালনার সাময়িক অনুমোদন বাতিলপূর্বক সনদের আবেদন মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটি আইন ২০০৬ এর ১৬ (৪) ধারা মোতাবেক নামঞ্জুর করেছে এবং গ্রাহক হতে গৃহীত সমুদয় আমানত আগামী ৩ মাসের মধ্যে ফেরত পূর্বক প্রমান সহ এ অথরিটিকে অবহিত করার জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করেছে। অন্যথায় তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।মর্মে বিষয়টি হবিগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার ও মাধবপুর থানার ওসিকে অবগত করা হয়।
ঘটনার বেশ কয়েকদিন পর নতুন চক্রান্তের অংশ হিসাবে প্রতিষ্ঠান ডেপুটি ডাইরেক্টর মোছা ; আমেনা বেগম স্বাক্ষরিত এক পত্রে জানানো হয় ৫ জুলাই হতে নিশান সোসাইটির কার্যক্রম পরিচালনা ও গ্রাহকদের লেনদেন সঠিকভাবে সম্পন্ন করার জন্য সবার সহযোগিতা ও আগামী ২০ জুলাই এর মধ্যে প্রতিশ্রুতি মোতাবেক সকলের লেনদেন প্রদান করা হবে।
তার দুইদিন পরেই জানা যায়, আমেনা বেগম নিশানের দ্বিতীয় তলার গ্রিল কেটে রাতের অন্ধকারে নিশান ছেড়ে পালিয়ে যায়। স্থানীয় ভুক্তভোগীরা বলছে একটি প্রভাবশালী মহল তাকে এখান থেকে পালিয়ে যেতে সহযোগিতা করেছে এতে গ্রাহকের মাঝে চরম হতাশা ও ক্ষোভ বিরাজ করছে। প্রশাসন নিরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছে। এ বিষয়ে কোন মামলা হয়নি।
জানতে চাওয়া হলে উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) জাহিদ বিন কাসেম বলেন ভুক্তভোগী গ্রাহকরা মামলা করলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
আপনার মতামত লিখুন :